Thu. Sep 11th, 2025

মুন্সীগঞ্জের কায়াতখালী গ্রামে হিজবুত তাহরির মৌলবাদীরা একটি নাচের স্কুলে আগুন দিয়েছে। তাদের ঘোষণা— “নাচ হারাম”। এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, কীভাবে অন্ধকারে বসবাসকারী গোষ্ঠীগুলো শিল্প-সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা এবং মুক্তচেতনার প্রতি চরম শত্রুতা লালন করে।

নাচ কি কেবল বিনোদন?

নাচ শুধু হাত-পা নড়ানোর নাম নয়। নাচ মানে শরীরের ভাষা, আত্মার প্রকাশ, আনন্দের স্রোত, সামাজিক বন্ধন। মানুষ যখন আনন্দে গান গায় ও নাচে, তখন সে তার ভেতরের দুঃখ, বেদনা ও আশার বার্তা প্রকাশ করে। নাচকে হারাম বলার মানে হলো মানবিক অনুভূতিকে অস্বীকার করা।

মৌলবাদী মানসিকতার বিপদ

যারা শিল্পকে হারাম ঘোষণা করে, তারা আসলে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিকগুলোকে নিষিদ্ধ করতে চায়। এই নিষেধাজ্ঞা শুধু নাচে থেমে থাকবে না—এরা গান, কবিতা, সাহিত্য, নাটক, এমনকি নারীশিক্ষা পর্যন্ত ‘হারাম’ বলে বন্ধ করতে চাইবে। আগুন দিয়ে নাচের স্কুল ধ্বংস করা মানে তারা শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্পনাশক্তি ও মুক্তচিন্তাকে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে চায়।

ধর্মের নামে ভ্রান্তি ছড়ানো

ধর্ম কখনো শিল্পের শত্রু নয়। ইতিহাসে দেখা যায়, সুফি সাধকরা গান, নৃত্য ও কাব্যের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ হিজবুত তাহরিরের মতো গোষ্ঠীগুলো ইসলামকে ব্যবহার করছে ভয় দেখানোর হাতিয়ার হিসেবে। তারা আগুন জ্বালাচ্ছে, অথচ তারা জানে না—এই আগুন তাদের অজ্ঞতার প্রতীক।

আমাদের করণীয়

আমাদের এখন দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে।

শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি আক্রমণ মানে মানবতার প্রতি আক্রমণ—এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও স্থানীয় প্রশাসনকে এই আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আমরা যারা নাচ, গান, সাহিত্য বা শিল্পকে ভালোবাসি, আমাদের ভয় পাওয়া যাবে না। কারণ ভয় পেলে অন্ধকার জয়ী হবে, আর দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করলে আলো জ্বলে উঠবে।

উপসংহার

কায়াতখালীর নাচের স্কুলে আগুন লাগানো হয়েছে, কিন্তু আগুন দিয়ে সত্যকে পোড়ানো যায় না। নাচ মানুষের আনন্দ, সৃজনশীলতা ও মুক্তির প্রতীক। মৌলবাদীরা যতই হারাম বলে চিৎকার করুক, নাচকে হারাম করা সম্ভব নয়। বরং এই আগুনই প্রমাণ করছে—তাদের ভেতরে যে অন্ধকার, সেটাই আসল হারাম।