মৌলবাদীদের অমানবিক বয়ান ও সমাজের অগ্রযাত্রা
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এক শ্রেণির মৌলবাদী গোষ্ঠী। এরা ধর্মের নামে মানুষের ওপর অমানবিক বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিতে চায়। সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জে হিজবুত তাহরির নামক জঙ্গী সংগঠন আবারও মুখ খুলেছে মেয়েদের শিক্ষা, শিল্পচর্চা, নাচ-গান নিষিদ্ধ করার দাবিতে। তাদের বক্তব্য আসলে একটি পশ্চাৎপদ মানসিকতার প্রতিফলন, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সাংবিধানিক অধিকার ও আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। মেয়েরা গান গাইবে, নাচ করবে, চিত্রশিল্প চর্চা করবে—এটি তাদের সাংবিধানিক ও মানবিক অধিকার। অথচ মৌলবাদীরা এই অধিকারকে অস্বীকার করতে চায় কেবল তাদের নিজস্ব গোঁড়া ব্যাখ্যার কারণে। বাস্তবে তারা ধর্মকে ব্যবহার করছে রাজনৈতিক স্বার্থে, মানুষের মননশীলতাকে দমিয়ে রাখতে।
ইতিহাস সাক্ষী—যখনই নারীশিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে দমন করার চেষ্টা হয়েছে, তখনই সমাজ পিছিয়ে পড়েছে। পাকিস্তান আমলে নারীদের জনসমক্ষে গান গাওয়ার বিরোধিতা করা হয়েছিল; কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশ সেই অন্ধকার ভেঙে আলোকবর্তিকা হাতে এগিয়েছে। আজকের দিনে হিজবুত তাহরিরের মতো গোষ্ঠী সেই অন্ধকারকে ফিরিয়ে আনতে চায়।
তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—একটি আতঙ্কের সংস্কৃতি তৈরি করা, যেখানে নারী হবে বন্দি, সংস্কৃতি হবে নিষিদ্ধ, স্বাধীন চিন্তাধারা হবে অপরাধ। অথচ বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় মেয়েরা শুধু অংশীদার নয়, তারা নেতৃত্বও দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা, প্রকৌশল, সাহিত্য, শিল্প—সবখানে নারীর অবদান স্পষ্ট।
তাই মৌলবাদীদের এই বয়ানকে আমলে নেওয়া মানে অগ্রগতিকে অস্বীকার করা। রাষ্ট্র, সমাজ ও নাগরিক সমাজকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে এদের প্রতিহত করতে। নাচ-গান নিষিদ্ধ করার মতো হাস্যকর দাবির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে, কারণ সংস্কৃতিহীন সমাজ কোনোদিন টিকে থাকতে পারে না।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে বিজ্ঞান, যুক্তি ও মানবিক মূল্যবোধের ওপর—not মৌলবাদী গোঁড়ামির ওপর।