মৌলবাদীরা কেন এতো উগ্র? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে, তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্য আসলে কী। তারা সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার শক্তিকে ভয় পায়, কারণ অগ্রগতি মানেই হলো প্রশ্ন তোলা, জবাবদিহি দাবি করা, আর প্রগতিশীল মূল্যবোধে আস্থা রাখা। মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো জানে, শিক্ষিত সমাজ তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন ফতোয়া মানবে না। তাই তারা নারীশিক্ষার ওপর বারবার আক্রমণ করে।
সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জের কায়ালখালীতে হিজবুত তাওহীদ নামে একটি উগ্রপন্থী দল ফতোয়া দিয়েছে যে মেয়েরা “বেশি দূর” পড়াশোনা করতে পারবে না। এই ফতোয়া শুধু হাস্যকরই নয়, এটি সরাসরি নারীর অধিকার, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় সংবিধানের বিরোধী। বাংলাদেশ সংবিধান নারী-পুরুষের সমান সুযোগের নিশ্চয়তা দিয়েছে। তাহলে কার অধিকার আছে নারীর শিক্ষার সীমা বেঁধে দেওয়ার?
নারীশিক্ষা মানেই সমাজকে শিক্ষিত করা। একটি মেয়ে যদি উচ্চশিক্ষা অর্জন করে, সে শুধু নিজের জীবনকে আলোকিত করে না, বরং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যায়। মৌলবাদীরা চায় সমাজ অন্ধকারে থাকুক, যাতে তারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ কারণে তারা সবচেয়ে বেশি ভয় পায় নারীশিক্ষাকে।
আমরা ভুলে গেলে চলবে না, মৌলবাদ কেবল ধর্মের নামে রাজনীতি করার অস্ত্র। তারা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে সমাজকে জিম্মি করতে চায়। অথচ ইসলামসহ সব প্রধান ধর্মেই জ্ঞানার্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের শিক্ষাবঞ্চিত রাখা কোনো ধর্মীয় নির্দেশ নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল।
মুন্সিগঞ্জের ঘটনার মতো প্রতিটি ফতোয়া আসলে রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য একটি হুঁশিয়ারি। এখন সময় এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, মিডিয়ায় এবং পরিবারে নারীশিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
নারীদের পথ আটকে রেখে সমাজ এগোবে না। মৌলবাদীদের উগ্রতা আসলে আমাদের অগ্রগতির ভীতির প্রতিফলন। তাই তাদের প্রতিটি ফতোয়ার জবাব হবে আরও বেশি মেয়ে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া, আরও বেশি নারী কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়া, এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
আমরা যদি নারীশিক্ষাকে রক্ষা করি, তাহলে সমাজকে মৌলবাদী অন্ধকার থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব।