মুন্সিগঞ্জে হিজবুত তাহরির মৌলবাদীরা সম্প্রতি এক ধারা ঘোষণা করেছে, যা নারীর শিক্ষার অধিকার সীমিত করার, পুরুষদের একাধিক বিবাহ বাধ্য করার এবং নাচ-গান বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে। এই ধরনের ফতোয়া কেবল নারীর অধিকারকে নয়, পুরো সমাজের প্রগতিশীলতা ও স্বাধীন চিন্তাকে আঘাত করে।
নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ করার চেষ্টা মানে অজ্ঞতার অন্ধকারকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার চক্রান্ত। মেয়েদের পড়াশুনা বন্ধ করলে শুধু তাদের ব্যক্তিগত সম্ভাবনা নয়, দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়। আজকের বিশ্বে যেখানে নারী শিক্ষিত হচ্ছে, সেখানে তারা স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, আইন ও প্রযুক্তিতে সমান অবদান রাখছে। একটি সমাজ যেখানে নারী শিক্ষিত, সেখানে দারিদ্র্য ও সামাজিক অন্যায় কমে।
মৌলবাদী ফতোয়ার মাধ্যমে পুরুষদের একাধিক বিবাহ বাধ্য করার প্রচেষ্টা পুরুষতান্ত্রিক ও অন্যায়। এটি শুধু নারীর স্বাধীনতা ও সুরক্ষা লঙ্ঘন করে না, বরং শিশু ও পরিবারকেও ভাঙনের দিকে ঠেলে দেয়। আধুনিক সমাজে একাধিক বিবাহ আর যৌক্তিক নয়, বরং এটি নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতনের হাতিয়ার।
নাচ-গান নিষিদ্ধের মতো আহ্বান মানে সংস্কৃতি ও আনন্দকে বন্দি করা। সৃজনশীলতা, শিল্প ও বিনোদন মানব জীবনের অপরিহার্য অংশ। এগুলোকে দমন করার চেষ্টা সমাজকে অমানবিক ও নীরস করে তোলে।
হিজবুত তাহরির মতো মৌলবাদীরা যা বোঝাতে চায়, তা হলো অন্ধনিষ্ঠভাবে পুরনো ধারণাকে আধুনিক সমাজে চাপিয়ে দেওয়া। তারা চাইছে নারীর স্বাধীনতা ও সম্ভাবনাকে বাধা দিয়ে সমাজকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার। আমাদের দায়িত্ব হলো এই ধরনের অযৌক্তিক ফতোয়ার বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর তোলার।
শিক্ষা, স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক বিকাশ এবং নারীর অধিকার আমাদের ন্যায্য অধিকার। এগুলোকে বাধা দেওয়া মানে আমাদের সমাজকে পেছনে ঠেলে দেওয়া। আমরা কখনো এই ধরনের মৌলবাদী আঘাতকে মেনে নিতে পারি না। নারীর অধিকার রক্ষা করা মানে সমাজকে শক্তিশালী করা, আর আমাদের এখনই সেই লড়াইতে দাঁড়াতে হবে।