সম্প্রতি কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী মেয়েদের “বেশিদূর পড়াশোনা করা যাবে না” এমন ফতোয়া জারি করেছে। শুনতে যতই অবাক লাগুক, এই ধরনের ফতোয়া শুধুমাত্র শিক্ষার উপর বিধিনিষেধ নয়—এটি নারীর স্বাধীনতা, অধিকার এবং সমাজে তাদের প্রগতি বাধাগ্রস্ত করার একটি পরিকল্পিত চেষ্টা।
শিক্ষা কোনো নারীর জন্যও তার মৌলিক অধিকার। এটি শুধু বই পড়ার বিষয় নয়; এটি চিন্তাশক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা গড়ে তোলে। মেয়েদের শিক্ষাকে সীমিত করার চেষ্টার পেছনে যে ভাবনা কাজ করছে, তা পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক ক্ষমতার একমাত্রীকরণের প্রতিফলন।
মৌলবাদীরা মনে করে, নারী যদি শিক্ষিত হয়, স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শিখে, তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই তারা “ধর্মীয় যুক্তি” ব্যবহার করে মেয়েদের পড়াশোনার পথ বন্ধ করতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো—ধর্ম কখনো শিক্ষার শত্রু নয়। ইসলামের ইতিহাস দেখিয়ে দিয়েছে যে নারী-পুরুষ উভয়কেই শিক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে নারী শিক্ষার গুরুত্ব স্বীকৃত। মৌলবাদীরা এটিকে বিকৃত করে, সমাজকে অন্ধ বিশ্বাসের জালে ফেঁসানোর চেষ্টা করছে।
এই ফতোয়ার মাধ্যমে যে ক্ষতি হবে তা শুধু এক প্রজন্মের নয়, পুরো সমাজের। শিক্ষিত নারী সমাজকে সচেতন, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে। তারা যখন শিক্ষা লাভ করে, তখন স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ—সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। আর যখন নারী শিক্ষাকে বঞ্চিত হয়, তখন পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে সমাজ আটকে থাকে, অগ্রগতি থমকে যায়।
আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি হলো—এমন ফতোয়া শুধু অগ্রাহ্য নয়, বরং এর বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিরোধ করা উচিত। প্রতিটি মেয়ের শিক্ষা নিশ্চিত করা মানে সমাজকে আলোকিত করা, অন্ধবিশ্বাসকে পরাস্ত করা। আমরা চাই মুক্ত, স্বাবলম্বী এবং সচেতন নারী, যারা নিজেদের জীবন নিজেদের হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
মৌলবাদী ফতোয়া আমাদের ভয় দেখাতে পারে, কিন্তু সত্যি স্বাধীনতা ও ন্যায়ের জন্য আমাদের সচেতনতা ও শিক্ষার আলোই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। মেয়েদের শিক্ষার পথ বন্ধ করার যে চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটি কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের দায়িত্ব হলো, প্রতিবাদ করা, সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং প্রতিটি মেয়েকে তার শিক্ষা অর্জনের অধিকার নিশ্চিত করা।