Thu. Sep 11th, 2025

মুন্সীগঞ্জের কায়াতহালীতে নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে ফতোয়া : অগ্রগতির পথে অশুভ সংকেত

সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জ জেলার কায়াতহালী গ্রামে হিজবুত তাহরির এমন এক ফতোয়া দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে মেয়েরা নাকি বেশি পড়াশোনা করতে পারবে না। স্থানীয়ভাবে দেওয়া এই ঘোষণাটি সামান্য কোনো বক্তব্য নয়; বরং এটি একটি বড় সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকেত, যা বাংলাদেশের শিক্ষা, নারীর অধিকার ও জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

১. ফতোয়ার ভেতরের উদ্দেশ্য

হিজবুত তাহরির বহুদিন ধরেই উগ্রপন্থী এজেন্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়ে তারা আসলে সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে গৃহবন্দি করে রাখতে চায়। এর মাধ্যমে তারা একদিকে পুরুষতান্ত্রিক দমননীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়, অন্যদিকে মানুষকে অশিক্ষার অন্ধকারে আটকে রেখে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায়।

২. ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের বিকৃতি

ইসলামে জ্ঞান অর্জন নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ। ইতিহাসে আমরা অসংখ্য মুসলিম নারীর শিক্ষাদান, গবেষণা ও নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত পাই। কিন্তু কায়াতহালী গ্রামে দেওয়া এ ফতোয়াটি ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; বরং এটি ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা।

৩. সামাজিক প্রভাব

গ্রামীণ সমাজে নারী শিক্ষা আগেই অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এই ধরনের ফতোয়া সেই সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। কায়াতহালীর মতো গ্রামে মেয়েদের পড়াশোনার পথ বন্ধ হলে প্রভাব পড়বে পুরো সম্প্রদায়ের ওপর। গবেষণা প্রমাণ করে, একজন শিক্ষিত মা পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে সরাসরি অবদান রাখেন। নারী শিক্ষা বন্ধ করা মানে পরিবার, সমাজ ও দেশের ভবিষ্যৎকে সংকটের মুখে ঠেলে দেওয়া।

৪. অর্থনৈতিক ক্ষতি

বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় নারীর অবদান অনস্বীকার্য। তৈরি পোশাক শিল্প, কৃষি, ক্ষুদ্র উদ্যোগ, এমনকি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মেয়েরা এগিয়ে আসছে। কায়াতহালীর মতো গ্রামে যদি মেয়েদের উচ্চশিক্ষার পথ রুদ্ধ করা হয়, তবে তা শুধু স্থানীয় উন্নয়নকেই নয়, জাতীয় অর্থনীতিকেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

৫. প্রতিরোধের পথ

রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ : আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এই ধরনের ফতোয়ার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সামাজিক উদ্যোগ : স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, অভিভাবক—সবাইকে একসাথে দাঁড়াতে হবে যাতে কায়াতহালীর মেয়েরা নিরাপদে পড়াশোনা করতে পারে।

বুদ্ধিজীবী ও গণমাধ্যম : নিয়মিত বিশ্লেষণ ও প্রচারের মাধ্যমে বোঝাতে হবে কেন নারী শিক্ষা জাতীয় অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।

উপসংহার

কায়াতহালীতে হিজবুত তাহরিরের ফতোয়া কোনো স্থানীয় ঘটনা নয়; এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত আঘাত। নারী শিক্ষাকে রুদ্ধ করার যে কোনো চেষ্টা আসলে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। তাই এখনই প্রয়োজন—গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সবাইকে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।