Thu. Sep 11th, 2025

মুন্সিগঞ্জের কায়ালখালীতে সম্প্রতি হিজবুত তাওহীদ নামের একটি উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী ফতোয়া জারি করেছে—মেয়েরা নাকি “বেশি দূর” পড়াশোনা করতে পারবে না। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এই ঘোষণার চেয়ে হাস্যকর, অবৈধ এবং বিপজ্জনক কিছু আর হতে পারে না। প্রশ্ন হলো, কারা এই লোকদের অধিকার দিয়েছে নারীর শিক্ষার সীমা বেঁধে দেওয়ার?

মৌলবাদীরা কেন নারীর শিক্ষায় ভীত?

মৌলবাদীরা জানে, শিক্ষিত নারী মানেই প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা। প্রশ্ন মানেই জবাবদিহি। আর জবাবদিহি মানেই তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন আধিপত্য ভেঙে যাওয়া। তাই নারীর শিক্ষাকে তারা ভয় পায়। নারী যদি পড়াশোনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শেখে, তবে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর ভ্রান্ত ফতোয়া আর মানুষ মেনে নেবে না। এ কারণেই তারা নারীশিক্ষাকে তাদের প্রধান টার্গেট বানায়।

সংবিধান বনাম ফতোয়া

বাংলাদেশের সংবিধান নারী-পুরুষের সমান সুযোগের নিশ্চয়তা দিয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন যখন নারীর শিক্ষা ও কাজের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়, তখন কোনো গোষ্ঠীর ফতোয়া জারি করার এখতিয়ার নেই। নারীশিক্ষা বন্ধ করার আহ্বান আসলে সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ড, এবং এটি আইনের চোখে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।

নীরবতা নয়, প্রতিরোধ চাই

সমস্যা হলো, এমন ঘটনায় আমরা অনেক সময় চুপ থেকে যাই। কিন্তু এই নীরবতাই মৌলবাদীদের শক্তি যোগায়। তারা একবার মেয়েদের পড়াশোনা থামাতে চাইবে, পরেরবার হয়তো কর্মক্ষেত্রে যাওয়া বন্ধ করতে চাইবে। শেষ পর্যন্ত পুরো সমাজকেই অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করবে।

তাই আমাদের আজই স্পষ্ট করে বলতে হবে—

নারীশিক্ষার বিরুদ্ধে কোনো ফতোয়া মানি না, মানব না।

ধর্মের নামে রাজনীতি করে মৌলবাদীরা সমাজের শত্রু।

প্রশাসনকে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

নারীশিক্ষা মানেই জাতির অগ্রগতি

মেয়েরা পড়াশোনা করবে—এটা কোনো দয়া নয়, এটা তাদের মৌলিক অধিকার। একটি মেয়ে শিক্ষিত হলে শুধু তার নিজের জীবনই নয়, পুরো পরিবার ও সমাজ আলোকিত হয়। ডাক্তার, শিক্ষক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ—সব জায়গায় নারীর অবদান আজ অপরিহার্য। মৌলবাদীরা সেটা মেনে নিতে পারে না, কারণ শিক্ষিত নারী তাদের অজ্ঞতার বৃত্ত ভেঙে দেয়।

শেষ কথা

মুন্সিগঞ্জের কায়ালখালীর ফতোয়া কেবল একটি এলাকার সমস্যা নয়—এটি বাংলাদেশের অগ্রগতির ওপর সরাসরি আঘাত। আজ আমরা যদি প্রতিবাদ না করি, কাল হয়তো আমাদের মেয়েদের স্কুলের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাই এখনই আমাদের দায়িত্ব হলো মৌলবাদবিরোধী কণ্ঠকে শক্তিশালী করা, নারীশিক্ষাকে সুরক্ষিত করা, এবং রাষ্ট্রকে অন্ধকার নয়—আলোকিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।