নাচের স্কুলে আগুন, চিন্তার স্বাধীনতায় হুমকি: মৌলবাদীদের মুখোশ খুলে দেওয়ার সময় এখন
আমি বাংলাদেশের [আপনার জেলা/উপজেলার নাম] এলাকার একজন নাগরিক।
আমি দীর্ঘদিন ধরে নারীদের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
বিশেষ করে আমি একটি নাচের স্কুল পরিচালনা করি, যেখানে মেয়েরা নিরাপদ পরিবেশে নাচ, সংগীত, সংস্কৃতি ও আত্মবিশ্বাসের পাঠ নেয়।
এই স্কুলটি আমার স্বপ্ন, আমার বিশ্বাস—এটা শুধু শিল্প নয়, মেয়েদের নিজেকে জানার, ভালোবাসার, আত্মমর্যাদা গড়ে তোলার পথ।
কিন্তু এই স্বপ্নের উপর আঘাত এসেছে।
আঘাত এসেছে ধর্মীয় মৌলবাদী একটি গোষ্ঠীর হাত থেকে—যারা মনে করে, নারীর নাচ-গান, শিল্পচর্চা “হারাম”, নারীর স্বপ্ন “ফিতনা”, এবং নারীর স্বাধীনতা একটি অপরাধ।
—
তাদের চোখে আমি অপরাধী, কারণ আমি মেয়েদের নাচ শেখাই!
ধর্মের নাম নিয়ে তারা আমাকে দিনের পর দিন হুমকি দিয়ে আসছিল—
> “তুমি মেয়েদের গান শেখাও, নাচ শেখাও, ইসলাম নষ্ট করছো।”
“তোমাকে চলতে দেব না।”
“তুমি ইসলামের দুশমন।”
আমি চুপ থাকিনি। আমি বিশ্বাস করি, সত্যিকার ইসলাম কখনও সংস্কৃতিকে ভয় পায় না। ইসলাম কখনও নারীর আত্মপ্রকাশ থামিয়ে দেয় না।
আমি আমার স্কুল চালিয়ে গেছি—বলে গেছি,
> “নাচ মানে কুপ্রবৃত্তি নয়, নাচ মানে নিজেকে প্রকাশ করা, নিজের শরীরকে সম্মান করার সাহস শেখা।”
—
তারপর যা ঘটলো, তা আমার দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়ানক
[তারিখ]-এ ধর্মীয় মৌলবাদী সেই গোষ্ঠী আমার নাচের স্কুলে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়।
তারা স্কুলের জানালা ভাঙে, দেয়ালে লিখে যায় “হারাম শিক্ষা চলবে না”,
আর শেষে অগ্নিসংযোগ করে আমার স্কুলটিকে ছাই করে দেয়।
আমার বুকের ভেতরটা যেন পুড়ে যায় সেই আগুনে।
এটা শুধু ইট-কাঠের স্কুল ছিল না, এটা ছিল শত শত মেয়ের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার একটি ঘর।
তাদের স্বপ্ন পুড়িয়ে তারা কী পেল?
—
তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার—নারী যেন না দেখে, না বোঝে, না ভাবতে শেখে
এই হামলা কেবল আমার বিরুদ্ধে না।
এটা একটি নারীবান্ধব, সাংস্কৃতিক, মুক্তচিন্তাসমৃদ্ধ বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও এক আক্রমণ।
যেখানে একজন নারী নাচতে পারে, গাইতে পারে, নিজের শরীর ও আত্মাকে সম্মান করতে পারে—সেই জায়গাটাকেই তারা ভয় পায়।
—
তাদের বলছি: ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ানো ইসলাম নয়
ইসলাম কখনো বলেনি নারীদের শিক্ষা থামিয়ে দাও। ইসলাম কখনো বলেনি সংস্কৃতি ধ্বংস করো।
আমাদের ইতিহাস বলে, মুসলিম সভ্যতা বিজ্ঞান, কবিতা, সংগীত, শিল্পে বিশ্বকে আলোকিত করেছে।
তাহলে আজকের এই ঘৃণার বার্তাবাহকেরা কোন ইসলাম শেখাচ্ছে?
—
আমার ঘোষণা: আমি থামবো না
তারা আগুন দিয়েছে আমার স্কুলে।
কিন্তু তারা আগুন দিতে পারেনি আমার বিশ্বাসে।
আমি আবার গড়ে তুলবো আমার স্কুল—নতুন করে, আরও বড় পরিসরে, আরও বেশি মেয়েকে নিয়ে।
আমার কলম থামবে না, আমার নাচ থামবে না, আমার প্রতিবাদ থামবে না।
—
আমি লিখছি, কারণ এই গল্প শুধু আমার না
বাংলাদেশের হাজারো নারী, শিল্পী, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ আজ মৌলবাদীদের টার্গেট।
তাদের মুখ বন্ধ করতে চায় যারা ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ায়।
তাই এখন সময় দাঁড়াবার—এই কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে, এই আগুনের বিরুদ্ধে, এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে।
—
শেষ কথা: তোমরা আগুন দাও, আমরা আলো জ্বালাবো
তোমরা যতই ভয় দেখাও, হুমকি দাও, আমাদের পথ রুদ্ধ করতে পারবে না।
আমরা মেয়েদের নাচ শেখাবো, গান শেখাবো, সাহস শেখাবো—
কারণ আমরা বিশ্বাস করি, যে সমাজে নারী নাচে, সে সমাজে অন্ধকার থাকেনা।