১১ বছরের কবর আর একটি সমাজের দায়: মোল্লা হায়দার আজম, এবার তোমার উত্তর চাই
আমি লেখালেখি করি এই সমাজের অন্ধকারে আলো জ্বালানোর জন্য।
আমি লিখি নারীর পক্ষে, তাদের শিক্ষার পক্ষে, তাদের স্বাধীনতার পক্ষে।
কিন্তু লিখতে লিখতে আজ আমার কলম কাঁপছে।
আমাদের গ্রামের তাসলিমা একটি ১১ বছর বয়সী মেয়ের বিয়ে হয়েছিল মোল্লা হায়দার আজম ও তার অনুসারীদের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়।
একবছরের মাথায় সে মাতৃত্বকালীন জটিলতায় মারা যায়—পেটের ভেতরেই মারা যায় তার শিশুটি।
তার মৃত্যুর আগে সে কয়েকদিন কেবল কাঁদতে পারত, ডাক্তার ডাকার সুযোগও পায়নি।
কারণ, সে ছিল “সংসারী বউ”, “লজ্জা ধরে রাখতে হয়”, “বাইরে যাওয়া যাবে না”—এইসব ধর্মীয় ছদ্মবেশী সংস্কারের বলি।
—
এই মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা ছিল পরিকল্পিত খুন
তাসলিমার বিয়ে হয়েছিল যখন সে ক্লাস ফাইভে পড়তো।
বয়স তখন মাত্র ১১।
আমি নিজে তার পাশে ছিলাম না, কিন্তু যখন খবর পেলাম, তখনই স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের ও একজন সরকারি হাসপাতালের গাইনি ডাক্তারকে দিয়ে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করি।
তারা স্পষ্ট বললেন:
> “একজন ১১/১২ বছরের কিশোরী শারীরিকভাবে মাতৃত্বের জন্য প্রস্তুত নয়।
তার শরীর তখনো কিশোরী পর্যায়ে থাকে—এমন সময় গর্ভধারণ মানেই মা ও সন্তানের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে।”
“এই মৃত্যু সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধযোগ্য ছিল। এটা অপ্রাপ্তবয়স্ক মাতৃত্বেরই পরিণতি।”
—
এমন বিয়ে কেন হয়? কে উৎসাহ দেয়?
আমরা জানি, এইসব বিয়ের পেছনে থাকে গ্রাম্য মোল্লাদের ফতোয়া, ভয়ভীতি, আর ‘ইসলামের নামে’ অপব্যাখ্যা।
এই মেয়েটির বিয়েতে মোল্লা হায়দার আজম-এর অনুসারীরা উপস্থিত ছিল।
তারা ছেলেপক্ষকে “সাবালিকা হয়ে গেছে” বলে উস্কানি দিয়েছিল।
তারা অভিভাবককে বলেছিল,
> “মেয়েরা তাড়াতাড়ি বড় হয়। বেশি বয়স হলে চরিত্র নষ্ট হয়।”
“বিয়ে দিয়ে দাও। পড়াশোনা করে কী হবে?”
“ইসলামে নারীর বেশি পড়ালেখার দরকার নেই।”
—
মোল্লা হায়দার আজম, এই মৃত্যু তোমার কাঁধে
এই শিশু-কিশোরীর মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
এটা তোমাদের মতো চরমপন্থী, ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী, নারী বিদ্বেষী লোকদের প্রচারেরই ফলাফল।
তোমরা সমাজকে অন্ধকারে রাখতে চাও।
তোমরা চাও, নারী যেন জন্ম নেয়, বিয়ে হয়, গর্ভ ধারণ করে, কবর পায়—কিন্তু কখনও নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে না পারে।
—
আমার প্রশ্ন: আর কত শিশু মারা গেলে তোমরা চুপ থাকবে?
এই দেশের সংবিধানে বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধ।
এই দেশের স্বাস্থ্যনীতিতে বলা আছে—১৮ বছরের আগে গর্ভধারণ মরণফাঁদ।
এই দেশের আইন ও চিকিৎসাব্যবস্থা তোমাদের মতো ধর্মীয় ব্যবসায়ীদের ছাড় দেবে না।
—
আমার কলম থামবে না, যতদিন না হায়দার আজম ও তার গোষ্ঠী বিচারের মুখোমুখি হয়
আমি এই মৃত্যু নিয়ে লিখেছি, আবার লিখছি, আরও লিখবো।
এই লেখার মাধ্যমে আমি দেশের সচেতন নাগরিকদের, সাংবাদিকদের, মানবাধিকার কর্মীদের বলছি—এই হত্যাকারীদের মুখোশ টেনে নামান।
এই শিশুদের রক্ষার লড়াই আমাদের।
এই সমাজে যতদিন একজন কিশোরী তার খাতা রেখে গায়ে বিয়ের শাড়ি জড়ায়,
ততদিন এই সমাজ আসলে অর্ধেক মৃত।
আমরা চাই না আর একটি শিশুকেও কবরে যেতে দেখার পর প্রতিবাদ করতে।
—
শেষ কথা: এই ব্লগ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটা এক ঘুষি অন্ধকারের মুখে
মোল্লা হায়দার আজম,
তোমার ফতোয়া শিশুদের মেরে ফেলছে।
তোমার চিন্তাধারা ঘৃণা ছড়াচ্ছে, কবর বড় করছে, স্বপ্ন পুড়িয়ে দিচ্ছে।
আমরা আর সহ্য করবো না।
আমরা চাই জবাব।
আমরা চাই বিচার।
আমরা চাই মেয়েরা বই হাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসুক—বিয়ের পালকি নয়, কলম হাতে।