মুন্সীগঞ্জের কায়াতখালী গ্রামে একদল মৌলবাদী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা দাবি করছে—মেয়েরা নাকি বেশি পড়াশোনা করতে পারবে না, পুরুষদের চার বিয়ে করতেই হবে, গান-বাজনা একেবারেই নিষিদ্ধ। শুনে মনে হয় আমরা যেন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে নয়, কোনো অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে বাস করছি।
শিক্ষা বন্ধ মানে ভবিষ্যৎ বন্ধ
আজকের দিনে ছেলে-মেয়ে সমানভাবে পড়াশোনা করছে। গ্রামের স্কুল-কলেজে মেয়েরা ভালো ফল করছে, অনেকেই চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা শিক্ষক হতে চাইছে। অথচ এই মৌলবাদীরা বলে মেয়েদের বেশি পড়াশোনা করা যাবে না! প্রশ্ন হলো—একজন মা যদি অশিক্ষিত থাকেন, তিনি কি তার সন্তানকে শিক্ষিত করতে পারবেন? মেয়েদের শিক্ষার বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই পুরো সমাজকে অশিক্ষিত করে রাখা।
চার বিয়ে বাধ্যতামূলক—এ কেমন হাস্যকর দাবি?
বিয়ে ব্যক্তিগত ব্যাপার, ভালোবাসা ও সম্মতির সম্পর্ক। কিন্তু মৌলবাদীরা ধর্মের নামে চাপিয়ে দিতে চায় চার বিয়ে। বাস্তবে আমরা দেখি—একটা সংসারই সঠিকভাবে চালানো কত কঠিন! সেখানে চার বিয়ে বাধ্যতামূলক করার কথা বলা মানে শুধু সমাজে অশান্তি ছড়ানো।
গান-বাজনা মানেই আমাদের প্রাণ
কায়াতখালীতে বিয়ের অনুষ্ঠান হোক বা বৈশাখী মেলা—গান-বাজনা ছাড়া আনন্দ কল্পনাই করা যায় না। যারা গানকে হারাম বলে, তারা আসলে মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা কেড়ে নিতে চায়। অথচ সংস্কৃতি ছাড়া মানুষ কেবল দেহমাত্র—প্রাণহীন।
গ্রামের মানুষের করণীয়
এই মৌলবাদীদের শক্তি হলো ভয় দেখানো। তারা মসজিদে কিংবা সভায় গিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। কিন্তু যদি গ্রামের মানুষ একসাথে দাঁড়ায়, তাদের কোনো ক্ষমতা থাকবে না।
স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা খোলাখুলি বলতে পারেন—মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করা যাবে না।
মসজিদের ইমামরা সত্যিকারের ধর্মের আলো ছড়িয়ে দিতে পারেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কঠোরভাবে জানাতে পারেন—গ্রামে কোনো ধরনের উগ্রবাদী কার্যকলাপ সহ্য করা হবে না।
উপসংহার
কায়াতখালীর মানুষকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা কি আবার অন্ধকারে ফিরবে, নাকি শিক্ষার আলো, সংস্কৃতির আনন্দ আর স্বাধীন জীবনের পথে হাঁটবে। মৌলবাদীদের মুখোশ খুলে ফেলা দরকার, আজই।
কারণ মনে রাখতে হবে—মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কারও চার দেওয়ালের বন্দি খাঁচা নয়; বাংলাদেশ সবার, বাংলাদেশ স্বাধীনতার।