মুন্সীগঞ্জের কায়াতখালী গ্রামে সম্প্রতি কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান আমাদের আবারও অন্ধকার যুগের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। হিজবুত তাহরিরের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা এই দলটি দাবি করছে—
মেয়েরা বেশি পড়াশোনা করতে পারবে না,
পুরুষদের চারটি বিয়ে করতেই হবে,
গান-বাজনা বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হারাম।
এই দাবিগুলো শুধু নারীবিদ্বেষী ও পশ্চাৎপদ নয়, এগুলো বাংলাদেশের সংবিধান, মানবাধিকার ও সামাজিক অগ্রগতির সরাসরি অবমাননা।
মেয়েদের শিক্ষাবঞ্চনা মানে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া
মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়ার মানে হলো অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে ইচ্ছাকৃতভাবে অজ্ঞ রাখার ষড়যন্ত্র। অথচ আমরা জানি, একজন শিক্ষিত মা মানেই একটি শিক্ষিত প্রজন্ম। যারা শিক্ষা বন্ধ করতে চায়, তারা আসলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
চার বিয়ের জোরাজুরি: ধর্মের নামে বিকৃতি
ইসলামে চার বিয়ের অনুমতি থাকলেও শর্ত দেওয়া হয়েছে কঠোর ন্যায়বিচারের। কিন্তু এই মৌলবাদীরা সেটিকে বাধ্যতামূলক করার কথা বলে ধর্মকেই বিকৃত করছে। বিবাহ ব্যক্তিগত অধিকার, এটি কারও জোরজবরদস্তির বিষয় নয়।
গান-বাজনা নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র
বাংলাদেশের সংস্কৃতি হাজার বছরের সমৃদ্ধ ধারায় গড়ে উঠেছে। নাচ, গান, কবিতা, নাটক আমাদের জীবনের অংশ। এগুলো নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে তারা কেবল সৃজনশীলতাকে হত্যা করছে না, আমাদের জাতীয় পরিচয়কেও আঘাত করছে।
আমাদের করণীয়
গ্রামের মানুষকে সচেতন হতে হবে, যাতে এসব গোষ্ঠী ভয় বা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে।
স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা যারা প্রগতিশীল, তাদের সরব থাকতে হবে। মৌলবাদীরা সংগঠিত হয়ে এগোচ্ছে, অথচ প্রগতিশীলরা চুপ থাকলে সমাজ আবারও অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।
উপসংহার
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জন্ম নেওয়া দেশ। এখানে মেয়েদের শিক্ষা, সংস্কৃতি চর্চা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিয়ে কোনো আপস করা যাবে না। কায়াতখালী গ্রামের মানুষদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা কি মুক্তিযুদ্ধের আলোয় হাঁটবে, নাকি হিজবুত তাহরিরের অন্ধকার গুহায় বন্দি হবে।