নারীর শিক্ষার বিরুদ্ধে ফতোয়া: মুন্সিগঞ্জে মোল্লা হায়দার আজমের অন্ধকারে জবাব চাই
মুন্সিগঞ্জের এক কোণায় আবারও অন্ধকার নামতে চায়।
স্থান—মুন্সিগঞ্জ।
ব্যক্তি—মোল্লা হায়দার আজম।
তার ফতোয়া—“মেয়েদের বেশিদূর পড়াশোনা করানো যাবে না”।
একুশ শতকে এসে এমন কথা যখন উচ্চারিত হয়, তখন বুঝে নিতে হয়—আমরা কেবল প্রযুক্তি বা উন্নয়নে এগোচ্ছি, কিন্তু কিছু মানুষের চিন্তাধারায় এখনো মধ্যযুগ বাস করছে। এই লেখাটি সেই পশ্চাৎগামী চিন্তার বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদ।
—
১. মোল্লা হায়দার আজমের ফতোয়া: কাদের জন্য বিপজ্জনক?
এই তথাকথিত ধর্মীয় নেতা, হায়দার আজম, দাবি করেছেন মেয়েদের উচ্চশিক্ষা “ফিতনা” ছড়ায়, তাদের বাইরে পড়তে দেওয়া “গুনাহ”, এবং নারীরা “বাড়ির বাইরে পড়াশোনায় গেলে চরিত্র হারায়”।
এই ফতোয়া কার স্বার্থে?
না দেশের, না ধর্মের।
এটি কেবল একটি কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য—যারা চায় নারী থাকবে চিরকাল অজ্ঞতায়, পুরুষতান্ত্রিক ছায়ায় বন্দি। কারণ তারা জানে, একজন শিক্ষিত নারী মানেই এক বিপ্লবের শুরু।
—
২. নারীশিক্ষা ও ইসলাম: অপপ্রচারের জবাব
হায়দার আজম বা তার মতো মোল্লারা যখন ইসলামকে ব্যবহার করে নারীকে গৃহবন্দী করতে চায়, তখন তারা মূলত ইসলামেরই অপমান করে।
ইসলামের প্রথম আদেশ ছিল “ইকরা”—পড়ো।
হযরত আয়েশা (রা.) ছিলেন অন্যতম জ্ঞানী সাহাবি, যিনি বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি ধর্ম ও সামাজিক বিষয়েও পুরুষদের শিক্ষা দিয়েছেন।
ইমাম শাফী, ইমাম আবু হানিফা—এদের সময়েও নারীরা শিক্ষা গ্রহণ করতেন। কেউ নারীশিক্ষার বিরোধিতা করেননি।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে—হায়দার আজম কোন ইসলামের কথা বলছেন?
তা আসলে ইসলাম নয়—তা হলো তার নিজের অন্ধ ক্ষমতালিপ্সা ও মনগড়া দাওয়াত।
—
৩. নারীশিক্ষা মানেই সমাজের উন্নয়ন
একজন মেয়েকে পড়ালেই আপনি একটি পরিবারকে আলোকিত করেন।
যখন একজন নারী শিক্ষিত হয়, সে সচেতন হয় নিজের অধিকার সম্পর্কে, সন্তানকে ভালোভাবে গড়ে তোলে, সমাজে দায়িত্ব নেয়।
আজ আমাদের সমাজে ডাক্তার, প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী—সবক্ষেত্রেই নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই সফল নারীরা কি হায়দার আজমদের চোখে “ফিতনা”?
এই প্রশ্ন তাকে, এবং তার অনুসারীদের—তোমরা কাদের শত্রু? নারীর, না এই দেশের?
—
৪. মুন্সিগঞ্জ আজ পথে নেমেছে—আমরা তাদের পাশে
এই ফতোয়ার প্রতিবাদে মুন্সিগঞ্জের মানুষ সোচ্চার হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা, অভিভাবকেরা, এমনকি ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও বলছেন—এই ফতোয়া ইসলামের নয়, বরং সমাজের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র।
আমরা যারা কলম হাতে তুলে নিই, আমাদেরও দায়িত্ব এখন এই ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা।
—
৫. শেষ কথা: ফতোয়ার বিরুদ্ধে আলো জ্বালাতে হবে
মোল্লা হায়দার আজমের মতো মানুষরা চায় এই দেশ অন্ধকারেই থাকুক, নারীরা যেন কেবল নীরবে কাজ করুক, অধিকার না জানুক।
কিন্তু এই বাংলাদেশ বেগম রোকেয়ার উত্তরসূরিদের।
এই দেশ শেখ হাসিনার, ড. ফেরদৌসী কাদরীর, মুনজেরিন শহীদের।
তাদের মুখ থামিয়ে রাখা যায় না।
—
আমার জোরালো বার্তা:
> “নারীর শিক্ষার ওপর ফতোয়া নয়, হায়দার আজমের মতো মানুষের মুখেই তালা দেওয়া উচিত।”
> “আমরা মেয়েদের থামাবো না—তাদের বই তুলে দেবো, কলম তুলে দেবো, পৃথিবীকে চিনতে শেখাবো।”