বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অংশে এখনো মৌলবাদী চিন্তাধারা নারীর স্বাধীনতা ও অধিকারকে সীমিত করতে দৃঢ়ভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। বিশেষ করে দুইটি দাবি সমাজে নিয়মিতভাবে শোনা যায়: এক, নারীর উপর চার বিয়ে বাধ্য করা; দুই, মেয়েদের শিক্ষার পথে বাধা দেওয়া। superficially এদের যুক্তি ধর্মীয় বিধির আড়ালে সাজানো হলেও, মূলত এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের একটি প্রক্রিয়া।
প্রথমত, চার বিয়ে নিয়ে দাবি মূলত পুরুষকেন্দ্রিক শক্তি ও নিয়ন্ত্রণের প্রতিফলন। একটি সমাজে যেখানে নারীর যৌন ও সামাজিক স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে পুরুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেখানে চার বিয়ে বাধ্যতামূলক করার মানে হল নারীর জীবনধারা ও বাচনভঙ্গির ওপর প্রভাব রাখা। এটি নারীর স্বাধীনতা সীমিত করে, এবং সমাজের পুরুষশাসিত শক্তির জন্য একটি নিরাপদ কাঠামো নিশ্চিত করে। নারীকে একটি নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী জীবন কাটাতে বাধ্য করা হলে, তার স্বাধীন চিন্তাভাবনা, স্বতঃস্ফূর্ততা ও আত্মবিশ্বাস প্রভাবিত হয়।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষার বিরোধিতা একটি সরাসরি নারীর ক্ষমতা হ্রাসের কৌশল। শিক্ষিত নারী কেবল পঠন-পাঠনের জ্ঞান অর্জন করে না, সে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়েও সচেতন হয়ে ওঠে। এই সচেতনতা পুরুষ বা সামাজিক রক্ষণশীল শ্রেণির ক্ষমতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। ফলে, মৌলবাদীরা মেয়েদের শিক্ষার পথকে বাধাগ্রস্ত করে, যাতে নারীরা ‘ধর্মীয়’ বা ‘সামাজিক’ দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ধারিত ভূমিকা পালন করতে বাধ্য থাকে।
তৃতীয়ত, এই দাবিগুলো সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও বিশ্লেষণযোগ্য। নারীর স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বৃদ্ধি পুরুষশাসিত কাঠামোর জন্য ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তাই মৌলবাদীরা ধর্মীয় বিধির আড়ালে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের কৌশল গ্রহণ করে। নারীকে সীমাবদ্ধ করা মানে হলো সমাজে শক্তি ও সম্পদের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা।
সংক্ষেপে, চার বিয়ে ও শিক্ষাবিরোধী মনোভাব superficially ধর্মীয় বিধি মনে হলেও, প্রকৃতপক্ষে এগুলো নারীর স্বাধীনতা হ্রাস, ক্ষমতা দমন এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার উপায়। আমাদের সমাজের প্রকৃত সমতা, নারীশক্তির মুক্তি এবং শিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করতে হলে এই ধরনের মনোভাবের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি ও শিক্ষার প্রসার অপরিহার্য।
মৌলবাদী দাবির আড়ালে লুকানো এই শক্তি নিয়ন্ত্রণ ও নারী দমনের কৌশল চিহ্নিত না করলে, আমরা কখনোই সত্যিকার অর্থে সমতা ও মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারব না। নারী শিক্ষিত হলে, সমানাধিকারে এগোবে, সমাজে সমৃদ্ধি এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা পাবে।