Thu. Sep 11th, 2025

মুন্সীগঞ্জের কায়াতখালি গ্রামে হিজবুত তাহরিরের পক্ষ থেকে এমন এক ফতোয়া জারি হয়েছে যে ১০ বছরের মেয়েকেও নাকি বিয়ে দেওয়া যায়। এ ধরনের ফতোয়া কেবল অমানবিকই নয়, বরং এটি বাংলাদেশের আইন, শিশু অধিকার সনদ ও মৌলিক মানবাধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত।

১. আইন ও মানবাধিকারের পরিপন্থী

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিয়ের জন্য মেয়েদের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। শিশু বিবাহ প্রতিরোধ আইন-২০১৭ অনুযায়ী অপ্রাপ্তবয়স্ক বিয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তির শাস্তির বিধান রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—প্রতিটি শিশুর শিক্ষা, নিরাপত্তা ও শারীরিক-মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। ১০ বছরের মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার ফতোয়া এই সবকিছুর সরাসরি লঙ্ঘন।

২. ধর্মীয় ব্যাখ্যার অপপ্রয়োগ

ধর্ম কখনোই শিশুর প্রতি অমানবিক আচরণ সমর্থন করে না। ইসলামেও বিবাহ একটি সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব, যেখানে শারীরিক-মানসিক পরিপক্বতা ও সম্মতির গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হিজবুত তাহরিরের মতো সংগঠন ধর্মকে বিকৃত করে মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয় এবং তাদের উগ্র রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

৩. সামাজিক ও মানসিক ক্ষতি

অপ্রাপ্তবয়স্ক বিয়ে একটি মেয়ের শিক্ষাজীবন বন্ধ করে দেয়, তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ থামিয়ে দেয়। অল্প বয়সে গর্ভধারণের কারণে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়, শিশুমৃত্যুর হারও বাড়ে। ফলে এই ধরনের ফতোয়া শুধু একজন শিশুর জীবন নষ্ট করে না, পুরো সমাজকে একটি দুষ্টচক্রে ফেলে দেয়।

৪. রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

হিজবুত তাহরিরের এই ধরনের ঘোষণার ভেতরে মূলত রয়েছে একটি রাজনৈতিক চাল। তারা জানে, অশিক্ষিত, অধিকারবঞ্চিত, অল্প বয়সেই দায়িত্বের বোঝায় জর্জরিত নারী সমাজ সচেতন হতে পারে না। সেই সুযোগে তারা তাদের উগ্রবাদী মতবাদ চাপিয়ে দিতে পারে।

৫. করণীয়

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে : কায়াতখালির ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে উগ্র ফতোয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন ভঙ্গকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সমাজ ও পরিবার : অভিভাবকদের বুঝতে হবে, অল্প বয়সে বিয়ে মানে সন্তানের জীবন ধ্বংস করা।

গণমাধ্যম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : নিয়মিত প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে কেন শিশু বিবাহ একটি অপরাধ এবং সামাজিক অভিশাপ।

উপসংহার

১০ বছরের মেয়েকে বিয়ের ফতোয়া দেওয়া মানে শিশুর শৈশব কেড়ে নেওয়া, তার স্বপ্ন ভেঙে ফেলা, এবং সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া। হিজবুত তাহরিরের এই ধরনের উগ্রবাদী প্রচারণা শুধু মানবতার শত্রু নয়, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্যও ভয়ংকর। এখনই প্রয়োজন—একযোগে প্রতিবাদ, কঠোর আইনি পদক্ষেপ, আর সবচেয়ে বড় কথা, শিশুদের অধিকার রক্ষার জন্য সমাজের সম্মিলিত সচেতনতা।