নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে ফতোয়া : সমাজকে পিছনে টেনে ধরার কৌশল
হিজবুত তাহরির সম্প্রতি এমন একটি ফতোয়া দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে মেয়েরা নাকি বেশি পড়াশোনা করতে পারবে না। এ ধরনের বক্তব্য শুধু নারীর অধিকার খর্ব নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজের ভবিষ্যতের জন্যও গভীর হুমকি।
১. ফতোয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
চরমপন্থী সংগঠনগুলো কখনোই শুধু ধর্মীয় ব্যাখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তাদের প্রতিটি ফতোয়ার পেছনে থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। নারী শিক্ষার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ মানে সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অচল করে দেওয়া। এর ফলে সমাজে দমননীতি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা যায়।
২. ধর্মীয় ব্যাখ্যার অপপ্রয়োগ
ইসলামে জ্ঞান অর্জন নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ। ইতিহাসে দেখা যায়, নারী আলেম, কবি, শিক্ষিকা, এমনকি শাসক পর্যন্ত ছিলেন। কিন্তু হিজবুত তাহরির ও অনুরূপ গোষ্ঠীগুলো ধর্মের মূল চেতনাকে বিকৃত করে নিজেদের এজেন্ডা চাপিয়ে দেয়। তাদের লক্ষ্য হলো সমাজকে এক ধরনের অন্ধ আনুগত্যের মধ্যে আবদ্ধ করা, যাতে প্রশ্ন তোলা, যুক্তি ব্যবহার করা বা বিকল্প ভাবনার সুযোগ না থাকে।
৩. সামাজিক প্রভাব
নারীর শিক্ষাকে অস্বীকার করার মানে হলো পরিবারকে অশিক্ষার দুষ্টচক্রে আটকে রাখা। গবেষণায় বারবার দেখা গেছে, একজন শিক্ষিত নারী তার সন্তানদের শিক্ষায় বেশি মনোযোগী হন। নারী শিক্ষার প্রসার কম জন্মহার, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, আর্থিক স্বনির্ভরতা ও সহিংসতা হ্রাস—এসব ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই নারী শিক্ষাকে সীমাবদ্ধ করার ফতোয়া কার্যত সমাজের অগ্রগতিকে স্থবির করার ষড়যন্ত্র।
৪. অর্থনৈতিক ক্ষতি
বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় অংশ গড়ে উঠেছে নারীদের শ্রম ও শিক্ষার ভিত্তিতে। তৈরি পোশাক শিল্প থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তি—সব ক্ষেত্রেই মেয়েরা এখন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। নারী শিক্ষায় বাধা মানে এই সম্ভাবনাকে ধ্বংস করা এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়া।
৫. প্রতিরোধের উপায়
এই ধরনের উগ্র ফতোয়া প্রতিহত করার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, সমাজের প্রতিটি অংশের।
রাষ্ট্র : আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে উগ্রপন্থী প্রচারণা রুখতে হবে।
সমাজ : পরিবার থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত নারী শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে হবে।
মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী সমাজ : ধারাবাহিকভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে কেন নারী শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের অপরিহার্য উপাদান।
উপসংহার
হিজবুত তাহরিরের ফতোয়া কোনো ধর্মীয় নির্দেশ নয়, বরং এক ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। মেয়েদের শিক্ষা থামানো মানে পুরো জাতিকে পিছনে টেনে ধরা। অগ্রগতি ও আধুনিকতার পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে নারী শিক্ষার বিরোধী প্রতিটি অবস্থানকে যুক্তি, প্রমাণ ও নীতির মাধ্যমে প্রতিহত করাই সময়ের দাবি।